প্রকাশিত: Wed, Dec 6, 2023 9:46 PM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 1:58 AM

বিএনপির ছেলেমানুষী আবরোধ, হরতাল ও নির্বাচন কমিশনের লোক দেখানো বদলি-তৎপরতা

গোলাম মোর্তোজা  : বিএনপির অন্দোলন এবং নির্বাচন কমিশনের আইওয়াশ নিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। একথা অনস্বীকার্য যে, বিএনপির জনসমর্থন আছে, বিএনপির ভোটার আছে। যদি দেশে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় অর্থাৎ যে নির্বাচনটিতে জনগণ ভোট দিতে পারবে সেরকম একটি নির্বাচন হয় তাহলে সেই নির্বাচনে বিএনপির ভালো করার একটি ব্যাপক সম্ভাবনা আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষণে আমার কাছে মনে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বহুগুণ দূরে আছে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার এখন একাকার হয়ে গিয়েছে। এরকম অবস্থাতে বিএনপি একধরনের দিকনির্দেশনাহীন অবস্থায় পড়েছে। বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপির আন্দোলন মানে অবরোধ-হরতাল। অবরোধ দেশে তখনই কার্যকর হয় যখন দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে পিকেটিং করেন। এছাড়া বাংলাদেশে কখনোই কোনো হরতাল-অবরোধ-ধর্মঘট কার্যকর হয় না। বিএনপি যেহেতু প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আছে, নেতারা কেউ বাইরে নেই আবার যারা বাইরে আছে তারা আত্মগোপনে আছে, কর্মীরা জেল জরিমানা, পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে আতঙ্কিত। সুতরাং তারা মাঠে থাকতে পারছেন না। কিন্তু বিএনপি অবরোধ এবং হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রীর অভাবে ছাড়ছে না। এর কারণ হলো মানুষের ভেতরে ভয় কাজ করছে গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে বলে। এই আগুনটি কে বা কারা দিচ্ছে? সরকার বলছে, বিএনপি দিচ্ছে, বিএনপি বলছে সরকারের দিক থেকে বা নানাভাবে দেওয়া হচ্ছে। যে বা যারাই দিক দায়টা বিএনপির ওপরই পড়ছে। কারণ বিএনপির কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করেই এই আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। মানুষ দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে না মূলত যাত্রী না পাওয়ার কারণে। এগুলোকে সফল হরতাল-অবরোধ বলা যায় না। বিএনপির এ ধরনের কর্মসূচি খুবই ছেলেমানুষী কর্মসূচি হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক পরিপক্কতা নেই। বিএনপির এখন কী করা উচিত সেটা আমরা বলতে পারবো না। সেটা বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে। তাকে পরিপক্কতার পরিচয় দিতে হবে। যে জনগণ বিএনপিকে ভোট দিতে চায় সেই জনগণও বিএনপির এই হরতাল বা অবরোধ সমর্থন করছে না। মানুষ ভোট দিতে চায়, হরতাল-অবরোধ চায় না। এ বিষয়টি বিএনপিকে বুঝতে হবে। তা বুঝেই বিএনপিকে কর্মসূচি দিতে হবে। কী কর্মসূচি দেবো, আর কিছু করার নেই সেটা বললে রাজনীতি করা যাবে না। এর মধ্য থেকেই রাজনীতি বের করে আনতে হবে। 

নির্বাচন কমিশন খুব দূষণীয় পর্যায়ে চলে গেছে। তারা শুরু থেকে যে প্রক্রিয়ার নির্বাচন করতে চাইছেন তাহলো সংবিধানের দোহাই দিয়ে যেকোনো মূল্যে একটি নির্বাচন করে ফেলতে হবে। হ্যাঁ, যেকোনো মূল্যে একটি নির্বাচন করতে হবে বলে সংবিধানে বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি যে, একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। ভোটার ভোট দেবে এরকম নির্বাচন করাটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই সেদিকে যায়নি। শুরু থেকে সরকার যা বলেছে, ইঙ্গিত দিয়েছে শুধু সেদিকে গিয়েছে। তাদের কথা এবং সরকারের কথা একাকার হয়ে গেছে। তাদের কর্মকাণ্ড এবং সরকারের কর্মকাণ্ড একাকার হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কখনোই এটা প্রমাণ করতে পারেনি যে তারা ভোটারের আস্থা অর্জনের জন্য অন্তত একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তারা রাজনৈতিক দলের ভাষায় বলেছেন কোন দল নির্বাচনে আসলো, কোন দল আসলো নাÑ এটা দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়। তারচেয়েও বড় কথা তারা আইনের অনেক ভুলভাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের যে অনাস্থা ছিল সেই অনাস্থা এখন আরও বেড়েছে। এখন এসে তারা নানা পর্যায়ের কর্মচারীদের বদলি করছে। সব ওসিকে বলদি করতে চায়, দুই বছরের বেশি যারা ইউএনও আছে তাদেরও বদলি করতে চায়। এভাবে বদলি করে নির্বাচন কমিশন কী অর্জন করতে চায়? সব জায়গাতেই  তো আওয়ামী লীগ। যে থানায় আওয়ামী লীগের যেই ওসি আছে তাকে বদলি করে অন্য থানায় দেওয়া হলো। কিন্তু সেই থানার নিয়ন্ত্রকও তো আওয়ামী লীগই। তাহলে কী লাভ হলো। তার মানে হলো নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক না করে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের আয়োজন না করে তারা জনগণকে আইওয়াশ করছে। কারণ সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলন নির্বাচনের অয়োজন করে নির্বাচন কমিশনের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, জনগণের আস্থা অর্জন করার কথা সেদিকে না গিয়ে শুধু লোক দেখানো বদলি কোনোভাবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না। ডামি প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না। কিংস প্রার্থী পরিচালিত হচ্ছে এক জায়গা থেকে, বিদ্রোহী প্রার্থী পরিচালিত হচ্ছে এক জায়গা থেকে, জাতীয় পার্টি পরিচালিত হচ্ছে এক জায়গা থেকে। এই এক জায়গা থেকে পরিচালিত নির্বাচন কখনও প্রতিদ্বন্দীতামূলক, অংশগ্রহণমূলক হয় না। নির্বাচন কমিশন কোনো রকম সুষ্ঠু নির্বাচন করার চেষ্টা না করে, স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে যে নির্বাচনটি করছে সেটা শুধু অর্থের অপচয়। আইনগতভাবে এটাকে অবৈধ বলা যাবে না। কিন্তু নৈতিকভাবে ব্যাপক প্রশ্ন তোলা যাবে। নির্বাচন কমিশনের আইনগত দিক যেমন দেখার দরকার ছিল নৈতিক দিক থেকেও সেরকম দেখার দরকার ছিল। বিএনপি নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাবে বিষয়টি সেটা নয় বিষয়টি হলো হত্যা, মামলা, হয়রানি, দণ্ড এসমস্ত জায়গায় নির্বাচন কমিশনের অনেক কিছু করার ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। এর দ্বারা দেশের জনগণ, ভোটার কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় নিবে না, বিশ্বাস করবে না। পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক। সূত্র : ‘গোলাম মোর্তোজা’ ফেসবুক পেইজের ভিডিও কনটেন্ট থেকে  শ্রুতিলিখন করেছেন  জান্নাতুল ফেরদৌস